চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় ট্রেন দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বেলা তিনটা থেকেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভিড় করতে থাকেন স্বজনেরা। সবাই হতাহত তরুণদের আসার অপেক্ষায় ছিলেন। নিহত ব্যক্তির তালিকায় যেন স্বজনের নাম না থাকে, সৃষ্টিকর্তার কাছে সে প্রার্থনাই করছিলেন।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে চেয়ারে বসে বিলাপ করছিলেন মো. মানিক। তিনি বারবার বলছিলেন, ‘আমার ভাইপো হিশাম (মুসহাব আহমেদ) আসছে নাকি? আল্লাহ তাঁকে কেন ওখানে নিয়ে গেল। আল্লাহ ওকে একটু বাঁচিয়ে রেখো।
আজ শুক্রবার দুপুরে মিরসরাই বড়তাকিয়া এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ আরোহী নিহত হন। গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। হতাহত ব্যক্তিরা সবাই ‘আরএনজে কোচিং সেন্টার’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ও শিক্ষক। এ ছাড়া মাইক্রোবাসের চালকও আছেন। তাঁদের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার খন্দকিয়া এলাকায়। দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, বিকেল চারটায় আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে আনা শুরু হয়। একেকটি ট্রলি হাসপাতালে ঢুকতেই স্বজনেরা দৌড়ে সেদিকে যাচ্ছিলেন।
তানভীর হাসান হৃদয়ের জন্য হাসপাতালে অপেক্ষা করছিলেন মা লাকী আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলে সকাল সাতটায় বাড়ি থেকে বের হয়। বলে গেছে—“মা, রাত ১০টায় ফিরব।” কোথায় আমার ছেলে? এখন কী অবস্থায় আছে জানি না। আমি যেতে না করেছিলাম তাকে।’
হৃদয় উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র। তারা এক ভাই ও এক বোন। ওই কোচিং সেন্টারটি ২০২২ সালের এসএসসির শিক্ষার্থীদের বিদায় উপলক্ষে মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝরনায় বেড়াতে নিয়ে যায়। তাদের সঙ্গে রাকিব, সজিব, রিদোয়ান ও জিসান নামের চার শিক্ষক ছিলেন। এ ছাড়া উচ্চমাধ্যমিকের কয়েকজন শিক্ষার্থীও ছিল।
শিক্ষক রাকিবের মা পারভিন বেগম বিকেল চারটার দিকে হাসপাতালে আসেন। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। বারবার খুঁজতে থাকেন ছেলে মোস্তফা মাসুদ রাকিবকে। রাকিবের চাচা সারওয়ার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা কয়েকজন কোচিং সেন্টারটি চালাতেন। বেড়াতে গিয়ে তাঁরা দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক আবদুস শুক্কুর হাসপাতালের সামনে মূর্ছা যান। তাঁর ছেলে আয়াতকে খুঁজছিলেন তিনি। আয়াতও ওই মাইক্রোবাসে ছিল।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া রেলস্টেশন এলাকায় পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসকে ট্রেনের ধাক্কার ঘটনার পর স্টেশনের গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনকে আটক করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বড়তাকিয়া এলাকা থেকে তাঁকে আটক করা হয়।
বেলা দেড়টার দিকে মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দেয় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী। এতে মাইক্রোবাসে থাকা ১১ জন নিহত হন। আহত হন আরও ছয়জন। প্রত্যক্ষদর্শী ও ট্রেনের যাত্রীদের অভিযোগ, দুর্ঘটনাস্থলে গেটম্যান না থাকায় কোনো সিগন্যাল বা প্রতিবন্ধক ছিল না।
সাদ্দাম হোসেনকে আটক করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজিম উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাস্থলে না থাকার অভিযোগে সাদ্দামকে আটক করা হয়েছে। ওই ঘটনায় মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
বেলা তিনটার দিকে মহানগর প্রভাতী ট্রেনের যাত্রী মো. কলিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মাইক্রোবাসটি গ্রামীণ সড়ক হয়ে মহাসড়কের দিকে যাচ্ছিল। সে সময় বৃষ্টিও পড়ছিল। পথিমধ্যে সড়কের লেভেল ক্রসিংয়ে সিগন্যাল বা প্রতিবন্ধক ছিল না। ছিলেন না লাইনম্যানও। ফলে কোনো বাধা ছাড়াই মাইক্রোবাসটি রেললাইনের ওপরে উঠে যায়। তখন মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কা লাগে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খৈয়াছড়া ঝরনা পর্যটনকেন্দ্র থেকে গোসল করে ফেরার পথে মাইক্রোবাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ট্রেনটি ধাক্কা দেওয়ার পর মাইক্রোবাসটিকে প্রায় এক কিলোমিটার ঠেলে নিয়ে যায়। মাইক্রোবাসে মোট ১৫ আরোহী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১১ জন ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসে ধাক্কা দেওয়ার পর ট্রেনের ইঞ্জিনের সঙ্গে আটকে পড়ে মাইক্রোবাসটি। এভাবে দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার ঠেলে নিয়ে যায় গাড়িটি। এ সময় পুরো রেললাইন এলাকায় চলে তাণ্ডবলীলা। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে পড়ে আছে মাইক্রোবাসের যন্ত্রাংশ, যাত্রীদের জামা, জুতা, ব্যাগ। উপড়ে পড়েছে রেললাইনের পাশের খুঁটি। দুমড়ে–মুচড়ে গেছে মাইক্রোবাসটি।
স্থানীয় বাসিন্দা খান মোহাম্মদ মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, বিকট শব্দ শুনে তিনি দৌড়ে বাড়ির বাইরে বের হয়ে দেখেন, চট্টগ্রামমুখী রেললাইনে একটি ট্রেন একটি মাইক্রোবাস সামনের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। যেখানে ট্রেনটি থামে, সেখান থেকে দুর্ঘটনাস্থল পর্যন্ত পুরো এলাকায় মাইক্রোবাসের খণ্ডাংশ, জামা, জুতা পড়ে আছে
আজ শুক্রবার দুপুরে মিরসরাই বড়তাকিয়া এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ আরোহী নিহত হন। গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। হতাহত ব্যক্তিরা সবাই ‘আরএনজে কোচিং সেন্টার’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ও শিক্ষক। এ ছাড়া মাইক্রোবাসের চালকও ছিলেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খৈয়াছড়া ঝরনা পর্যটনকেন্দ্র থেকে গোসল করে ফেরার পথে মাইক্রোবাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ট্রেনটি ধাক্কা দেওয়ার পর মাইক্রোবাসটিকে প্রায় এক কিলোমিটার ঠেলে নিয়ে যায়। মাইক্রোবাসে মোট ১৫ জন আরোহী ছিলেন। স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা হতাহত ব্যক্তিদের লাশ উদ্ধার করে বড়তাকিয়া রেলস্টেশনে রেখেছেন।
Leave a Reply