রোগীর চিকিৎসায় একজন চিকিৎসককে কতগুলো বিশেষ দিকে নজর রাখতে হয়। একজন ভালো চিকিৎসককে
চিকিৎসার আগে অবশ্যই রোগী এবং রোগ সম্বন্ধে ভালো জানতে হবে এবং রোগীর প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।
অসুস্থ ব্যক্তির ইতিহাস গ্রহণ (History Taking)
অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে চিকিৎসা সেবার পূর্বে রোগ নির্ণয় বা ডায়াগনোসিস (Diagnosis) করা উচিত।
এই ডায়াগনোসিসের দুটি পথ আছে। প্রথমটি হল রোগীর ইতিহাস নিয়ে পর্যালোচনা করা। শারীরিক পরীক্ষণ ও
সহায়ক সাধারণ ইনভেস্টিগেশন। দ্বিতীয়টি হল কোনো অঙ্গে কার্য ও গঠনের গোলযোগ পর্যলোচনা- যা প্যাথলজির
আওতাভুক্ত। এই বইটি মূলত প্রথমোক্ত পদ্ধতিতে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা সেবার জন্য।
রোগীর ইতিহাস নেয়া এক ধরনের আর্ট। যিনি এ ব্যাপারে যত দক্ষ রোগ নির্ণয় করা তার জন্য তত সহজ। রোগী
কোনো নির্দিষ্ট রোগের নাম বলে চিকিৎসককে জানাতে হবে-
ক.রোগীর পরিচয় : প্রথমে রোগীর নাম, বয়স, পেশা, ঠিকানা, ধর্ম জানিতে হয়।
খ.তাৎক্ষনিক সমস্যা (Presenting Complaint) অর্থাৎ যে প্রধান প্রধান সমস্যার জন্য রোগী
চিকিৎসকের কাছে এলেন; যেমন- বেদনা, জ্বর, কাশি ইত্যাদি এক বা একাধিক উপসর্গ নিয়ে।
গ.তাৎক্ষনিক অসুস্থতার ইতিহাস (History of Present Illeness) এবারে রোগী তার অসুস্থতার পূর্ণাঙ্গ
বিবরণ দিবেন। তারপর চিকিৎসক প্রয়োজনীয় তথ্যাদি বের করতে সচেষ্ট হবে। এক্ষেত্রে ধরুন ব্যথা নিয়ে
যদি কোন রোগী চিকিৎসকের শরণপান্ন হন তাহলে চিকিৎসকের জানতে হবে-
ব্যথার স্থান (Site) : ব্যথাটি কোথায়? কোন এক জায়গায়, নাকি ব্যাপ্ত।
বিস্তৃতি (Radiation) : ব্যথা কি এক জায়গায় স্থির; না ইহা স্থান পরিবর্তন করে কিংবা ছড়ায়।
ব্যথার ধরন (Severity) : এটি কি সামান্য ব্যথা, না তার কাজকর্ম বন্ধ করার মত, না রাতের ঘুমে বিঘ্ন
ঘটাবার মত। এটি সামান্য অস্বস্তি থেকে তীব্র যন্ত্রণা হতে পারে।
সময় (Timing) : এটি কখন শুরু হয়েছিল? কখন হয়, কখন চলে যায়?
ব্যথার বৈশিষ্ট্য (Character) : ব্যথাটি কি ধরনের; যেমন- চাকুমারা, জালা যন্ত্রণা, খোঁচামারা, বাড়ে কমে
(Colic) কিংবা একই রকম থাকে ইত্যাদি।
শুরু হয় এরপর যতদূর পর্যপ্ত বাড়ে এবং কিভাবে কমে আসে (Occurrence or aggravation) : কি
করলে ব্যাথাটি শুরু হয়? কিসে অবনতি হয়? বুকের মাঝখানের ব্যথা যেটি সর্বদাই কিছুটা পরিশ্রমের পর শুরু
হয় এবং আরও শ্রম বৃদ্ধি পায় সেটি প্রায় নিশ্চিতভাবেই হৃদপিণ্ডের ইসকেমিয়ার জন্য। অথচ ঠিক একই
প্রকৃতির ব্যথাটি যদি খাবার অল্পক্ষণের পর শুরু হয় সম্ভবত সেটি ইসোফেগাসে বেদনা।
পরিত্রাণ (Relief) : কিসে ব্যথাটির পরিত্রাণ হয়? অছি-মাংসের ব্যাথা কেবলমাত্র পজিশন পরিবর্তনে কমতে
পারে। ডিওডেনাল আলসারের বেদনা খাবার গ্রহণে কমতে পারে। তলপেটের ব্যথা মলত্যাগ বা বায়ু নির্গমনে
কমতে পারে। হার্টের ব্যথা বিশ্রামে কমে। এমনি সাধারণ উপসর্গ থেকে রোগের উৎস ধরা সম্ভব।
রোগী যেকোনো উপসর্গই করুক সেটির প্রাসঙ্গিক তথ্যাদি এভাবে বের করতে হবে।
ঘ.পূর্বের ইতিহাস (Pant History)। অতীত ইতিহাস অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়। রক্তকমন হচ্ছে এমন রোগীর
অতীতে পেপটিক আলসার থাকার ইতিহাস প্রায়ই পাওয়া যায়। যন্সার রোগী অসম্পূর্ণ চিকিৎসার ফলে পরবর্তীতে
বুকের সমস্যা নিয়ে আসতে পারে। এসব ক্ষেত্রে অতীত ইতিহাস জানা থাকলে রোগ নির্ণয় সহজ হয়।
ঙ.অসুস্থ ব্যক্তি যদি কোনো মেয়ে এবং বয়স (১৫-৪৫)-এর মধ্যে মানিকের ইতিহাস (Menstrual
History)। মহিলাদের মাসিকের ইতিহাস নিতে হবে। সাধারণত ২৮ দিন পর পর মাসিক শুরু হয় এবং
তিন থেকে পাঁচ দিন থাকে। তবে এর যথেষ্ট বিচ্যুতি কোন রোগ ছাড়াই ঘটতে পারে।
কত বছর বয়সে মাসিক শুরু হয়েছে, বন্ধ হয়ে থাকলে তা কবে হয়েছে জেনে নিন। স্রাবের পরিমাণ কেমন.
কম বা বেশি, দুই দিনের কম কিংবা আট দিনের বেশি যাব হলে তা অস্বাভাবিক বলে গণ্য হবে। মাসিকের
সময় ব্যথা হয় কি না। রোগিনী খাবার বড়ি ব্যবহার করে কি না জেনে নিন।
চ,পেশাগত ও ব্যক্তিগত ইতি (Occupational and personal History) পেশার সাথে বহু রোগ
সম্পর্কযুক্ত। আর ধূম পান, মদ্যপান, অন্যকোন নেশা বাদ মাদকাসক্তি এবং যৌন অভ্যাস অনেক রোগের
কারণ। ফলে এগুলো জেনে নিতে হবে। অবশেষে রোগীর মানসিক অবস্থা জেনে নিন।
ছ.পারিবারিক ইতিহা (Family History)। পারিবারিক তথ্যাদি প্রয়োজন। এজন্য যে সংক্রামক ব্যাধি।
পরিবারের একজনের থাকলে অন্যেরও হতে পারে। তাছাড়া বংশগতিও রয়েছে।
জ.চিকিৎসার ইতিহাস (Treatment History)। রোগী যদি পূর্বে চিকিৎসা নিয়ে থাকে তাহলে কি রোগের
জন্য কি ধরনের ওষুধ পেয়েছে সেটাও জানা আবশ্যক। ওষুধের কারণেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
Leave a Reply