3:22 PM
মায়ের ভালোবাসার গল্প
**সুন্দর একটি পরিবার ছিলো, পরিবার দারিদ্র্য হলেও তাদের মধ্যে ভালোবাসায় ছিলো ভরপূর। পরিবারটিতে সদস্য ছিলো ৩ জন, বাবা মা আর তাদের ফুটফুটে একটি ছেলে সন্তান। তারা তাদের সন্তানের নাম রখছিলো রাহুল।
*রাহুলের বাবা ছিলো হার্টের রুগি,তেমন কোনো কাজ করতে পারতোনা শরীরের সুস্থতার সাধ্য অনুযায়ী যা পারত তা করতো,
তার যে টুকো ইনকাম তা তার ঔষধের পিছনে চলে যেতো। তাই বাধ্য হয়ে রাহুলের মা লোকের বাসায় কাজ করা শুরু করলো।
এভাবে করে তাদের সংসার ভালোই চলছিলো।
*হটাৎ করে একদিন রাহুলের বাবা অসুস্থ হয়ে পরে আর তখন ঘরে ছিলো রাহুল ও তার বাবা, তার মা তখন কাজ করতে গেছিলো।
রাহুল আর কোনো কিছু চিন্তা না করে তার মাকে ডাকতে গেলো, রাহুলের বাবার অসুস্থতার কথা শুনে রাহুলের মা তারাহুরা করে বাসায় আসলো।
বাসায় এসে দেখে রাহুলের বাবা শুয়ে আছে।
রাহুলের মা বললোঃ ওগো সুনছো!
তোমার কি বেশি কষ্ট হচ্ছে,এরকম বলতে বলতে সে তার মুখের কাছে যায় আর তখনি অনুভব করতে পারে রাহুলের বাবার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে।
তখোনি তিনি হাও-মাও করে কাঁদতে শুরু করলো আর বলতে লাগলো রাহুল তোর বাবা আর নেই!! এ কথা শুনে রাহুলো হাও-মাও করে কাঁদা শুরু করলো। প্রতিবেশীরা শুনে এলো তারপর তার জানাযা দাপন কাপনের কার্যক্রম শেষ করলো।
মায়ের ভালোবাসার গল্প
*রাহুলের বাবা যখন মারা যায় তখন তার বয়স ৯বছর।
*রাহুলের বাবার মৃত্যুতে রাহুল ও তার মা মর্মাহত হয়। রাহুলের মা চিন্তিত হয়ে পরে কিভাবে সংসার চালাবে কি করে রাহুলকে একা মানুষ করবে। রাহুলের মা আবার কাজে যাওয়া শুরু করলো আর সেই টাকা দিয়ে পড়াশোনার খরচ চালাতো সংসার চালাতো।
*রাহুল ক্লাসেও ভালো ছাত্র ছিলো।
*একদিন কলেজে হঠাৎ তার একটা মেয়ের সাথে দেখা হয়। এরপর তারা পরিচিতো হয়, মেয়েটি ছিলো ধনী পরিবারের। তারপর তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব শুরু হয়। আস্তে আস্তে তাদের বন্ধুত্ব আরো গভীর হয়।
*কয়েকদিন পর ময়েটি কলেজে বসে রাহুলকে বললো, আজকে তোমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাবো সবার সাতে পরিচয় করিয়ে দিবো।
রাহুলের মধ্যে একটু ভয় ভয় কাজ করে।এতো বড় পরিবার আমাকে তারা জামাই হিসেবে কি মেনে নিবে।
রাহুল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব চিন্তা করে! মেয়েটি রাহুলকে ডাক দিয়ে বললো, তুমি চিন্তা করোনা। আমি আমার পরিবারকে বুজিয়ে বলবো, তারপর রাহুল মেয়েটির বাসায় যায় সবার সাথে পরিচিত হয়। রাহুলের হুবু শাশুড়ী রাহুলকে ডাক দিয়ে বললো, তোমার সাথে আমার আলাদা করে কিছু কথা আছে।
রাহুল বললোঃ আচ্চা আপনি বলেন। শাশুড়ীঃ তুমি আমার মেয়েকে যদি বিয়ে করতে চাও,তাহলে তোমার মায়ের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করতে হবে।
মায়ের ভালোবাসার গল্প
কারন আমাদের পরিবার সমৃদ্ধশীল একটি পরিবার, সেখানে আমার মেয়েকে এক কাজের লোকের ছেলের সাথে বিয়ে দিতে পারবোনা।
*তুমি যদি তোমার মায়ের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করতে পারো তাহলেই এ বিয়ে হবে। আর না-হয় তুমি আজ থেকে আমার মেয়ের সাথে কোনো রকম যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেনা। রাহুল সব কথা শুনে চুপচাপ বাড়ি চলে আসে।
*রাহুল বাড়ি আসার পর, রাহুলের মা বললোঃ বাবা তুই হাত মুখ ধূয়ে আয়, আমি তোর জন্য ভাত দিতেছি।
*রাহুল হাত মুখ ধূয়ে এসে খেতে বসলো খাবার যেন তার গলা থেকে নামেছেনা। মা জিজ্ঞেস করলো; বাবা তোর কি হয়েছে?তোর কি কোনো সমস্যা হয়েছে?তোর কি শরীর খারাপ? রাহুল কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চুপচাপ উঠে গেলো। রাহুল সারা রাত চিন্তা করলো! সকালে উঠে মাকে ডাক দিয়ে বললো,মা আমার কিছু কথা বলার আছে।
মা বললোঃ আচ্ছা বাবা বলঃ তুমি আজ থেকে আমার সাথে কোনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেনা,বুজবা তোমার ছেলে মারা গেছে। মা টলমলো চোখে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে বাবা তোর? হঠাৎ এরকম বলো কেনো? রাহুল কিছু না বলে চলে গেলো। রাহুলের মা আজ যেন পৃথিবীর সব কিছুই হারিয়ে ফেললো! রাহুলের মা প্রতেকটা মূহুর্ত কাদতো শুধু রাহুলের মা ডাকটি শোনার জন্য। রাহুলের মা ভাবতো,
এই বুজি আমার রাহুল এসে ডাক দিয়ে বলবে মা ভাত দাও ক্ষুদা লাগছে। রাহুল তার হুব শাশুড়ীকে গিয়ে বললো,আমি আমার মায়ের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে আসছি।এখন আমার সাথে আপনার কন্যার বিয়ে দিন।
*এরপর রাহুলের বিয়ে হয়।
*রাহুলের বিয়ের কিছুদিন পর রাহুলের করোনা পজিটিব আসে! রাহুলের পাশে কেউ আসেনা এমনকি তার স্ত্রীও না। একপর্যায়ে রাহুলের শাশুড়ী বললো,তুমি তোমার মায়ের কাছে চলে যাও। আমরা তোমার সেবা যত্ন করতে পারবোনা।
সুস্থ হলে আমাদের বাসায় এসো, এ কথা বলে শাশুড়ী চলে গেলো।
*সকাল হওয়ার সাথে সাথে রাহুল তার মায়ের কাছে চলে আসলো।রাহুল যখন ঘরের সামনে এসে মা বলে ডাক দিলো! রাহুলের মা ছুটে এসে জরিয়ে ধরে বললো, বাবা তুই আসছো! বাবা তুই আমাকে ছেরে যাসনা। তোর বাবা মারা যাওয়ার পর আমি তোকে আকড়ে ধরে বেঁচে আছি এ কথা বলে আর কাঁদে।
*রাহুল তার মাকে বললো মা! তুমি আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখো, আমার করোনা পজিটিভ আসছে! মা এ কথা শুনে তার মূখের দিকে তাকিয়ে বলে,
বাবা আমি যদি তোর সেবা করি আর তাতে যদি আমারো করোনা হয় তাতে কোনো ভয় নেই! আর আমি যদি মারা যাই তাহলে তো তুই খুশি হবি, আমার জন্য তোকে আর অপমানিত হতে হবেনা।
মায়ের মুখ থেকে একথা শোনার পর তার বুক যেন ধুমরে মুছরে যায়, রাহুল জোরে চিৎকার দিয়ে তার মায়ের পায়ের উপর পরে বলতে লাগলো, মা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি ভূল করেছি। মা তার সোনাকে ক্ষমা করে দিয়ে বুকে ঝরিয়ে নিলো!
*মা মানে অকৃত্রিম ভালোবাসা।
*মা মানে স্নেহ আর মমতার ঝুলি।
*মা মানে শত অপরাধে ক্ষমাসুলভ দৃষ্টি।
মাকে নিয়ে একটা কবিতা
মাগো! তুমি এসেছো তাই আলোকিত হয়েছে এভুবন,
জন্মেছি আমি তোমার কোলে ধন্য হয়েছে জীবন।
শত জন্মেও তোমাকেই যেন বার বার ফিরে পাই,
পরকালেও আমি শুধু ‘মা’ তোমাকে চাই
লেখিকা: রুমানা আক্তার